
আল মামুন ,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা আহছানিয়া মিশনে দেশের বৃহত্তম ও বিশ্বেও দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রমজানের এক মাসে এখানে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার লোক ইফতার করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও রমজানের প্রথম দিন থেকে বৃহত্তম এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম রোজা থেকে এখানে এখন পর্যন্ত প্রত্যেকদিন সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার চারশত রোজাদার একত্রে বসে ইফতার করছেন । সওয়াব হাসিলের জন্য বড় এ ইফতার মাহফিলে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইফতারের উদ্দেশ্যে নলতায় ছুটে আসেন রোজাদাররা। ধনী, গরিব নির্বিশিষে সকল মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে বসে ইফতার করেন।
এখানে ইফতার সামগ্রী বিতরণের জন্য রয়েছে দুইশত থেকে আড়াই শত স্বেচ্ছাসেবক।সবাই এসেছেন নিজ উদ্যোগে।আর ৩০জন রয়েছেন দৈনিকহারে বেতন ভুক্ত।সকাল দশটা থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়। সাড়ে তিনটার পর থেকে কাজ বণ্টন শুরু করা হয়।আছরের নামাজের পর থেকে ইফতার সাজানোর কাজ শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন সূত্রে জানা যায়, রোজার প্রথম দিনে ৬ হাজার ৪০০ জনের ইফতার প্রস্তুত করেছি। এভাবে চলে রমজানের ৩০ দিন পর্যন্ত। ইফতারের তালিকায় আছে ফিরনি, ডিম, ছোলা ভুনা, খেজুর, সিঙ্গাড়া ও কলা। প্রতিদিন ১৫ মণ দুধের ফিরনি তৈরি করা হয় এখানে।রোজাদারদের জন্য প্রথম দিনে প্রায় ৬ হাজার প্লেট ইফতার প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু তা তো সংকুলন না হাওয়াই পরে আরো প্লেট বাড়ানো হয় এছাড়াও নলতা শরীফের আশপাশের এলাকার মসজিদ ও বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় এক থেকে দেড় হাজার রোজাদারের ইফতার। রয়েছে সুপেয় পানির বিশেষ ব্যবস্থা। তবে শেষ দশ রমজানে আরও বেশি লোক সমাগম হয়ে থাকে। দেশ বিদেশের ভক্তগণ যৌথভাবে এই ইফতারের অর্থ যোগান দিয়ে থাকেন। ইফতারের পূর্বে প্রতিদিন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। এ আয়োজন সফল করার জন্য প্রতিবছর রোজার ৫০ দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ইফতার শেষে এই প্রাঙ্গনেই আদায় করা হয় মাগরিবের নামাজ।
মিশন কর্তৃপক্ষ জানান, আহ্ছানউল্লা (র.) ১৯৩৫ সালে নিজের হাতে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি নিজেই প্রতি বছর রমজান মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। পরবর্তী সময়ে এই ইফতার মাহফিলের পরিধি বেড়ে যায়। ১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতারের আয়োজন করে আসছে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন। ইফতার মাহফিলে সকলে একত্রে বসার জন্য আহছানউল্লা (রহ.) এর মাজার প্রাঙ্গনে বিশাল টিনের ছাউনি নির্মাণ করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, তারা চেষ্টা করেন, যাতে ইফতার করতে আসা রোজাদারদের কোনো অসুবিধা না হয়। প্রথমে ছাউনির নিচে মাদুর বিছানো হয়। তারপর সারি সারি লাইন করে পানির বোতল দেওয়া হয়। তারপর গ্লাস-প্লেট। সাড়ে পাঁচটার দিকে ইফতার মাহফিল তৈরি হয় জনসমুদ্রে।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনে ইফতার করতে আসা সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন নলতা কেন্দ্র আহছানিয়া মিশন এই মিশনে যে ইফতার মাহফিল সেটা আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। কারণ হাজার হাজার মানুষ যে ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করে দেখার মতন বিষয়। আর এটার যে মূল বিষয়বস্তু ছিল খান বাহাদুর আসানুল্লাহ( রহ.) আলাইহি উনার যে উদ্দেশ্য ছিল (স্রষ্টার ইবাদত সৃষ্টির সেবা) এটাই আমাদের মূল মন্ত্র হওয়া উচিত বলে তিনি জানান। হাজার হাজার মানুষের ইফতার মাহফিল সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করার জন্য এটা অনুসরণীয় মনে হয়েছে তাহার কাছে। তিনি আরো বলেন সমাজে যারা নিরন্ন মানুষ আছে তাদের প্রতি আমরা যেন দৃষ্টি দিতে পারি। জনমানুষের জন্য এত যে আয়োজন এখানে কোন মানুষ অভুক্ত থাকে না এখানে মানুষের থাকার ব্যবস্থা ইবাদত বন্দেগী করার ব্যবস্থা অনেক বই-পুস্তক পাঠ করার ব্যবস্থা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান।
অপরদিকে সাতক্ষীরাসহ পার্শ্ববর্তী যশোর জেলা থেকে আগত অনেকে বলেন আমরা এতদিন নলতা কেন্দ্রীয় আহছান মিশনে হাজার হাজার লোকের ইফতারের কথা লোকমুখে শুনেছি আজ নিজেরা আসতে পেরে এত লোকের সাথে একসাথে ইফতার করতে পারায় নিজেদেরকে ধন্য মনে করছি।