
সজল মাহমুদ
রাজশাহী স্টাফ রিপোর্টার
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ৩৫তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার ২য় দিনের জুম‘আর খুৎবায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে গোটা দুনিয়া জুড়ে চলছে যুলুম ও অত্যাচারের রাজত্ব। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে চলছে মানুষের অধিকার হরণ। তারই এক জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত হল ফিলিস্তীন, যেখানে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ইসরাঈল নির্বিচারে প্রায় ৭০ হাজার মুসলমান হত্যা করে পুরো গাযাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার পরও ক্ষান্ত হয়নি। উল্টো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পৈশাচিক নির্মমতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে গাযার বাকী অধিবাসীদেরকে বিতাড়িত করে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র বানাতে চায়! বাংলাদেশেও একটি যুলুম-অবিচারপূর্ণ শাসনামলের পর নতুন একটি যুগ সূচিত হয়েছে। তবে যদি ইসলামের ন্যায়বিচার ও মানবতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার উদ্যোগ না নেয়া হয়, তবে পুনরায় যুলুম ফিরে আসবে নতুন রূপে। এজন্য যে কোন মূল্যে ইসলামের আলোকে একটি ইনছাফপূর্ণ মানবিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। ইসলামের ভিত্তিতে সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ী সংস্কারের পথে অগ্রযাত্রা করতে হবে।
তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক সমাজ গড়ার আন্দোলন। এই আন্দোলন বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন। এই আন্দোলন রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবীদের রেখে যাওয়া ইসলামের দিকে ফেরার আহ্বান। তিনি সকলকে ইসলামের নামে প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার ও শিরক-বিদ‘আত ছেড়ে দিয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন দেশের সরকার ও প্রশাসনের নিকটে নিুোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।
(১) ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসাবে বাংলাদেশে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
(২) দল ও প্রার্থীবিহীন নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বিদ্যমান দলীয় রাজনীতির ভয়াল বিষবাষ্প থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
(৩) শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের চলমান সিলেবাস থেকে নাস্তিক্যবাদ, বিবর্তনবাদ, লিঙ্গসমতাসহ সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী বিষয়সমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
(৪) ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দেশের বিচার ব্যবস্থায় ইসলামী আইন কার্যকর করতে হবে।
(৫) সূদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা বাতিল করে ন্যায় ও ইনছাফভিত্তিক ইসলামী অর্থনীতি চালু করতে হবে।
(৬) বিভিন্ন সরকারী অফিসে দুর্নীতি ও ঘুষ-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং এর সাথে জড়িতদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
(৭) সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৮) ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি অবিলম্বে বন্ধ করা এবং দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
(৯) দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী সকল বৈদেশিক চুক্তি বাতিল করতে হবে এবং সীমান্তে দৈনন্দিন বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করতে হবে।
(১০) ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে পদ্মা ও তিস্তার পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গকে শুকিয়ে মারার ভারতীয় চক্রান্তের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(১২) দেশের বিভিন্ন স্থানে আহলেহাদীছ মসজিদ ও মাদ্রাসা ভাংচুর করা, আহলেহাদীছ মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয়া এবং আহলেহাদীছ সম্মেলন-সমাবেশকে বন্ধ করার জন্য যারা এখনও পর্যন্ত অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসনকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সাথে পিসটিভি সহ ইসলামপন্থী মিডিয়া ও এনজিওগুলোকে স্বাধীনভাবে ইসলাম প্রচারের সুযোগ দিতে হবে।
(১৩) এ সম্মেলন ফিলিস্তীনে ইস্রাঈলী ও পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং সেখানে নিহত-আহত মযলুম ফিলিস্তীনীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। সেই সাথে গাযা থেকে ফিলিস্তীনীদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদের পশ্চিমা নীল-নকশার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এই নির্মম পৈশাচিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার, ওআইসিসহ বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে।